পাবলিক স্পিকিং এ খুব একটা অভিজ্ঞতা নাই! যখন এবছর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট সিম্পোজিয়াম এ আমার প্রজেক্ট ওরাল এর জন্য সিলেক্ট হয়েছিল, তখন থেকেই মাথায় ঘুরতে শুরু করে সাড়ে তিন বছরের কাজ কীভাবে ১০ মিনিটে উপস্থাপন করা যায়!
সাইক্লিং করি, পাশ দিয়ে চলে যায় লন্ডনের ঐতিহাসিক সব স্থাপনা, আমার মাথায় ঘুরে স্টোরি লাইন! শুরুটা কীভাবে করবো, শেষটাই বা কীভাবে হবে!
স্লাইড বানাতে শুরু করলাম, মাঝে হঠাৎ মনে হলো স্লাইড বানানোর ১০১ কেন করে ফেলি না?
যেই ভাবা সেই কাজ, একে একে ২৫ টার মতো ভিডিও দেখে মোটামুটি অভিজ্ঞ! স্টোরি লাইন ধরে স্লাইড বানিয়ে ফেললাম! মাত্র ৪৫ টা! মিরাজ স্যার এর কাছে পাঠালে, উনি বললেন এটা তো প্রায় দুই ঘণ্টার ক্লাসরুম লেকচারের স্লাইড! এখন সবমিলিয়ে ১০ টাতে নিয়ে আসতে হবে! ক্লাসরুম লেকচারের অভ্যাস এখনও যায়নি!
সমস্যা হলো দুটো, ১) আমার স্টোরি লাইন বেঁকে যাচ্ছে; ২) স্লাইড ১০১ এর ব্যাকরণ অনুসারে সব স্লাইড এখন “very busy”!
যাহোক, মঙ্গলবার সিম্পোজিয়াম। সোমবার পুরো গ্রুপের সামনে ডেমো দিতে হবে। সকাল থেকেই জ্বর! ১০০ ডিগ্রি! নাকে পানি।
ডেমোর আগে জ্বর! মনের মধ্যে উথাল পাথাল! আমি কি ভয় পাচ্ছি? নাকি প্রেজেন্টেশন এর আগে এমনই হয়! ইংল্যান্ডে এসে যা শিখলাম “সবার আগে নিজের সেফটি”, সেই সূত্রে উচিত হলো সুপারভাইজার কে বলে বাসায় গিয়ে GP এর সাথে যোগাযোগ করা!
মনে দ্বিধা, বলতে যাবো, নাকি যাবো না! পানি আনতে বারান্দায় যেতেই সুপারভাইজর এর সাথে দেখা। প্রথম প্রশ্ন স্টোরি লাইন ঠিক করেছ? উত্তরে বললাম জ্বর। নাকে পানি, বুকে কফ। উনি যেহেতু ফার্মাসিস্ট এবং এই আবহাওয়া সম্পর্কে জানেন, একটা ঔষধ খেতে বললেন আর বললেন “it will be fine”। [এইটাই হলো একা একা পিএইচডি করার সমস্যা। চাপে নিজের ভেতরেই দ্বিধা তৈরি হয়, আত্মবিশ্বাস নেমে যায়। এজন্যই বড় স্কলারশিপ প্রোগ্রামে স্পাউস দের জন্য ভাতার ব্যবস্থা রাখা হয়!]
ঔষধ খাবার পর আসলেই দেখি জ্বর জ্বর আর নাই! GP এর সাথে কথা হলো। গত সপ্তাহেই এক ডোজ অ্যান্টিবায়োটিক নিয়েছি। শর্ত সাপেক্ষে আরেক ডোজ দিলেন। শর্ত কভিড টেস্টে নেগেটিভ হতে হবে! সোমবার রাত থেকে ডোজ শুরু করতে হয়েছে। মঙ্গলবারের মধ্যে চেষ্ট এক্সরে করতে হবে। মানে আমার ব্যাকটেরিয়াল জে ইনফেকশন হয়েছে তা প্রথম যে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়েছিলাম তার প্রতি রেজিস্ট্যান্স ক্ষমতা তৈরি করে ফেলেছে!
মঙ্গলবার প্রায় শুরুতেই আমার টক ছিল, ৩য় বক্তা ছিলাম। মানুষকে নিজের বিষয়ে যুক্ত করার যত টেকনিক শিখেছিলাম, শুরুতেই কাজে লাগিয়েছি।
একটা পরিসংখ্যান ছিল এমন “ইউকে তে বাস করে যারা তাদের ২ জনের মধ্যে ১ জন তাদের জীবদ্দশায় ক্যান্সার এ আক্রান্ত হবে!”
আমি বলেছি “হয় আমি নাহয় তুমি আমাদের জীবদ্দশায় ক্যান্সার আক্রান্ত হতে যাচ্ছি”! সবাই তখনই নড়েচড়ে বসেছে! আমি শুধু গল্প টেনে গেছি!
তারপর ১১ টার দিকে এক্সরে করে আবার সিম্পোজিয়াম এ ফিরে আসি। বেশ কিছু রিসার্চ বেশ ভালো লেগেছে। তার মূল কারণ সেগুলি বাংলাদেশের মতো কম রিসোর্স সম্পন্ন দেশে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে!
প্রতি সিম্পোজিয়াম এ আমি বসে থাকি এক্সপার্ট টক শোনার জন্য। যার মধ্যে দিয়ে সমাপ্ত হয় আয়োজন। “The Digital Future of Surgery” এই শিরোনামে প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন প্রফেসর প্রকার দাশগুপ্তা। রোবটিক সার্জারি এর শুরু, ভবিষ্যৎ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এর ব্যবহার, আর্থিক বিষয় ইত্যাদি।
এই টক থেকে নেয়া মূল শিক্ষার বিষয় হলো,
RRI, Responsible Research and Innovation
সবাই অর্থ উপার্জনের জন্য নতুন কিছু সৃষ্টির জন্য ঝাঁপায় না, কেউ কেউ সমাজের জন্যও লাফ দেয়। দিনশেষে সত্যি হলো “মানুষ সামাজিক জীব”।
আমাদের গবেষণায় প্রথম R টাকে আরও বোল্ড করতে হবে।
[Responsible (definition): having an obligation to do something, or having control over or care for someone/something, as part of one’s job or role; being the primary cause of something and so able to be blamed or credited for it.]