অন্তর্মুখী হলে যা হয়, আশে পাশের অনেক সুবিধা-অসুবিধার কথা জানা হয় না। ফলে হাতের নাগালের সুবিধা গুলি নেয়া হয় না, আর অসুবিধায় পরে তার তিক্ত অভিজ্ঞতা পেতে হয়! সাস্টিয়ান বনভোজনে যাওয়ার সময় ফয়সাল ভাই এর গাড়িতে Krittebas Paul দাদার কাছে শুনলাম আমরা যারা টাওয়ার হেমলেটস এর বাসিন্দা তারা নাকি মাত্র ১ পাউন্ডে টাওয়ার ব্রিজ দেখতে পারি! মানে টাওয়ার ব্রিজ এর ভিতরে ঢুকে এর নির্মাণশৈলী, ইতিহাস, পাখির চোখে লন্ডনের রূপ দেখা, সাথে এর চালিকা শক্তি বা ইঞ্জিনের ভিতরটা দেখা যায়! যেহেতু আমি এই বরাতেই (borough) আছি ১ বছর, তাই গত সপ্তাহে এক ফাঁকে চলে গিয়েছিলাম টাওয়ার ব্রিজে! সে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। ইতিহাস সংক্ষেপে বলতে গেলে, লন্ডনের বাণিজ্যিক উৎকর্ষতা বজায় রাখতে লন্ডন ব্রিজ এর পরে আর একটা ব্রিজ দরকার ছিল যা একসাথে নৌপরিবহন এবং জনপরিবহন বজায় রাখতে পারবে! ১৮৭৬ এর দিকে সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি কমিটি হয়; যার ফলশ্রুতিতে ১৮৯৪ সালে উদ্বোধন হয় এই ব্রিজ এর। যা গত এক শতাব্দী থেকে লন্ডনের ওপর নাম হয়ে আছে! এটা একটা বেসকুল ব্রিজ (bascule), কাজ করে ঢেঁকিকল এর মতো (পার্কে বাচ্চাদের seesaw খেলার মতো)। খাটি বাংলায় বলা যায় দুটি ঢেঁকিকে উল্টো করে মুখোমুখি বসিয়ে দেয়া হয়েছে, শুধু মুষল নেই কিন্তু এর ভারসাম্য রক্ষা করা হয় পাদানি কে ইঞ্জিনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে। যখন নৌযান আসবে, ইঞ্জিন দুই ঢেঁকির পাদানিতে তে চাপ দিবে ওমনিই তা ৮৬ ডিগ্রী উপরে উঠে পথ করে দিবে! ভেতরে দেখার মতো মূলত দুটি টাওয়ার, উত্তরের টি দিয়ে উঠতে হয় আর দক্ষিণের টি দিয়ে নামতে! তারপর ইঞ্জিন কক্ষে ঢোকার জন্য টাওয়ার ব্রিজে নীল রঙ্গ এর একটি দাগ আপনাকে নিয়ে যাবে ইঞ্জিন কক্ষে, যা সিটি ভবনের পাশে আন্ডারগ্রাউন্ড এ অবস্থিত! টাওয়ারে ঢুকতেই স্টিলের সিঁড়ি, সাথে বিভিন্ন ব্যানারে নানা ঐতিহাসিক তথ্য দেয়া আছে! খেয়াল করে দেখলাম ব্রিটিশরা সংখ্যা খুব কার্যকর ভাবে ব্যবহার করতে পারে! উদাহরণ দেয়া যাক, এই ব্রিজে ব্যবহৃত কিছু উপাদানের সংখ্যা নিম্নরূপ:
- ইট: ৩১ মিলিয়ন
- গ্রানাইট এবং পাথর: ৩০২৪ টি লন্ডনের টেলিফোন বক্স এর সমান
- লৌহ: ১০০০ টন (৫৪ টি লন্ডনের কালো ট্যাক্সির সমান)
- স্টিল: ১০০০০ টননাট-বল্টু: ১৩-১৪ মিলিয়ন
- টাওয়ার ব্রিজ এর ওজন: ৩৭৮৪০ কালো ট্যাক্সির সমান
টাওয়ার এর উপরে দেখার মতো জিনিস ৩ টি। প্রথমেই একটা হল এর মতো জায়গায় কেন টাওয়ার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল তা বোঝানোর আয়োজন! ২৫০ এর বেশি সিঁড়ি বেয়ে উঠার পর সবাই এখানে একটু বসে! মানুষের ক্লান্তিকে কাজে লাগানর উৎকৃষ্ট উপায়! একটা প্রকাণ্ড পর্দায় ক্রমাগত বেজে চলে ৩ মিনিটের একটা মুভি! যেখানে সে সময়কার লন্ডনের ব্যস্ততা সাথে টাওয়ার ব্রিজ এর নির্মাণ এবং খুলে দেয়ার ফুটেজ আছে! পর্দার সামনেই রাখা আছে কয়েকটা ঝুড়ি! মাছ, ফলমূল শাক সবজিতে এসব পূর্ণ! এসবের মাঝে কুণ্ডলী পাকিয়ে সেখানে রাখা আছে বিড়ালের প্রতিকৃতিও! ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য নৌপরিবহন খুব প্রয়োজন ছিল বুঝলাম কিনত বিড়ালের কি প্রয়োজন ছিল?বেশি চিন্তা না করে প্রশ্ন করে বসলাম সেখানে থাকা টাওয়ার ব্রিজ এর কর্তাব্যক্তিকে! উনি বললেন, খেয়াল করে দেখুন সেখানে একটি ইঁদুর ও আছে! খাবার দাবার থাকলে সেখানে ইঁদুর থাকবেনা, তা কি হয়? তাই বিড়ালের ব্যবস্থা! দ্বিতীয়ত, দুই টাওয়ার এর উপরে যে সংযোগ করিডর তার কাঁচের তৈরি মেঝে! যা থেক নিচে বহমান ট্রাফিক এবং ওয়াটার বাস চলে যাবার দৃশ্য চোখে লেগে থাকার মত!তৃতীয়ত, ওই করিডর থেকে লন্ডন দেখার স্মৃতি! সবশেষে, নিচে আছে ইঞ্জিন কক্ষ! বর্তমানে এটি আর ব্যবহার হয় না তাই সবার জন্য উন্মুক্ত (টিকেট করা লাগে), কারণ এখন হাইড্রলিক পাওয়ারের পরিবর্তে তেল আর বিদ্যুৎ চালিত ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়।