আমাদের আব্বা সাধারণত লুঙ্গী পরতেই অভ্যস্ত ছিলেন। তা সে বিয়ের দাওয়াত হোক বা গুরুত্বপূর্ণ সালিশ। আমাকে সাধারণত বিয়ের দাওয়াত এ নিয়ে যেতেন। একবার তেমনই এক বিয়েতে খেয়াল করলাম আব্বা প্যান্ট-শার্ট পরে যাচ্ছেন নতুন লুঙ্গি-শার্ট এর পরিবর্তে। প্যান্ট টা যে খুব ভালো তাও না। খটকা লাগলো সেখানেই! বিয়েবাড়িতে খাওয়া দাওয়ার পর সাধারণত একসাথে যারা চলেন তাদের মাঝে দলবেঁধে আড্ডা হয়, আব্বা সাধারণত সেখানেই থাকেন। আজ ঘটনা ভিন্ন। উনি এরকম বিভিন্ন দলে যাচ্ছেন এবং সবাইকে যেচে বলছেন যে এই প্যান্ট উনাকে আমার এক মামা উপহার হিসেবে ভারত থেকে এনে দিয়েছেন! আব্বার কানি আঙ্গুলে ধরে হাটার বয়সী হলেও, বুঝতে পারছিলাম অনেকেই বাঁকা চোখে তাকাচ্ছে! কেউ কেউ চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দিলো কি এমন কাপড় যে ভারত থেকেই আনতে হবে, আমাদের স্টেশন এর বাজারেই তো পাওয়া যায় এর চেয়ে ভালো! আব্বাও নিশ্চয়ই বুঝেছেন! কিন্তু পর ক্ষনেই দ্বিগুণ উৎসাহে আরেক দলের কাছে একই বয়ান করেছেন। বাসায় রিক্সা করে ফেরার সময় জিজ্ঞেস করেছিলাম এসব বলে বেরানর কারণ কি, আব্বা? কি বলেছিলেন মনে নেই! সারসংক্ষেপ যা মনে আছে তা এরকম, উনি আসলে সেই মামার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চেয়েই এই কাণ্ড করেছিলেন। উনার কাছে, মামা এই যে নিজের কাজে ভারতে গিয়েও আব্বার মতো একজনের কথা মনে করেছে এবং উনার পছন্দ মতো কিছু একটা নিয়ে এসেছে তা জাগতিক অর্থ-বিত্ত দিয়ে মাপার বিষয় না, তা ছিল স্বর্গীয় অনুভূতির প্রকাশ! তাই মামার জন্য আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়া দরকার। যাদের কাছে মামার কথা বলেছেন এদের মধ্যে অন্তত একজনও যদি মামাকে এই কথা বলে তাহলে মামার মনটা খুশি হয়ে যাবে, এই ছিল কারণ!
আব্বা কতো কিছুই এভাবে শিখিয়ে ২২ বছর আগে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন পরজগতে! আব্বার জন্য আমাদের ভালোবাসায় সিক্ত কৃতজ্ঞতাটুকু নিবেদন করছি ইহলোক থেকে।
নোট: সামনে বাবা দিবস। বর্ণমালা- SUSTian Bengali School, UK এর বাচ্চাদের দিয়ে কি করবো ভাবছিলাম। হঠাৎ প্রথম আলোর একটা প্রতিযোগিতার বিজ্ঞাপন দেখলাম! তাই অংশ নিয়ে ফেললাম। আপনিও নিতে পারেন। উপরের লেখাটি আমি পাঠিয়েছি! লিংক কমেন্ট এ!