সুখ: জীবনের প্রকৃত সম্পদ?

[Disclaimer: I am endeavouring not to forget what I see and am learning to lead a fulfilling life. As part of this journey, I have begun to maintain a personal repository of insights gathered from various sources. This write-up is, one might say, a translation of a video on the Big Think Channel.

https://www.youtube.com/watch?v=2WShJeNX7W8]

Photo by Yuyang Liu on Unsplash

সুখ নিয়ে অ্যারিস্টটলের দৃষ্টিভঙ্গি

অ্যারিস্টটল তার “নিকোম্যাকিয়ান এথিকস” গ্রন্থে যুক্তি দিয়েছেন যে আমরা জীবনে যা কিছু করি, তা সবই কোনো না কোনো পরবর্তী উদ্দেশ্যের জন্য।

  • আমি স্কুলে যাই শিক্ষা অর্জনের জন্য।
  • আমি শিক্ষা অর্জন করি চাকরি পাওয়ার জন্য।
  • আমি চাকরি করি টাকা উপার্জন করতে, যাতে ভালো কিছু কিনতে পারি।

এভাবে চলতে থাকে একটার পর আরেকটা উদ্দেশ্য।

কিন্তু অ্যারিস্টটল যে প্রশ্নটি করেন, তা হলো— এর চূড়ান্ত লক্ষ্য কী?
এই সিঁড়ির শীর্ষে আসলে কী আছে? তার মতে, সকল মানুষের জীবনের মূল লক্ষ্য হলো সুখ অর্জন।


সুখের প্রকৃতি

আমরা সুখকে একটি হাস্যোজ্জ্বল মুখ এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলা সেলফির সঙ্গে যুক্ত করি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সুখ মানে শুধুমাত্র হাস্যোজ্জ্বল মুখ নয়, বরং একপ্রকার “আত্মার প্রশান্তি”।

কিন্তু আমরা কেন এটি বোঝার ক্ষেত্রে বিভ্রান্ত হই?


দাওবাদী দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে “সুখের পথ

দাওবাদের মতে, জীবন একটি ঘন, কাঁটাযুক্ত অরণ্যের মতো

  • এই অরণ্যের মাঝখানে রয়েছে একটি সহজ ও সমতল পথ—এটি সহজ পথ, যেখানে হাঁটা তুলনামূলক সহজ।
  • কিন্তু এছাড়াও রয়েছে অন্যান্য পথ, যা কখনও জলাভূমির মধ্যে দিয়ে যায়, কখনও কাঁটাযুক্ত ঝোপের মধ্যে দিয়ে, কখনও উঁচু-নিচু পাহাড়ের মধ্য দিয়ে। এই পথগুলো কঠিন।

সুখ ঠিক এরকমই।

কিছু নির্দিষ্ট পথ আমাদের জন্য সঠিক মনে হতে পারে, কিন্তু চারপাশে এমন অনেক বিকল্প পথ থাকে যা আমাদের বিভ্রান্ত করতে পারে। আমরা প্রায়ই বুঝতে পারি না যে আমরা ভুল পথে হাঁটছি, যতক্ষণ না এটি আমাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়ে।


দর্শনের ইতিহাসে সুখের অনুসন্ধান

আমি যখন দর্শনের ইতিহাসকে একটি বৃহৎ মানচিত্র হিসেবে দেখি, তখন কিছু সাধারণ থিম উঠে আসে:

  • কীভাবে সুখ অর্জন করা যায়?
  • কীভাবে সর্বোৎকৃষ্ট জীবনযাপন করা যায়?
  • কীভাবে একজন ভালো মানুষ হওয়া যায়?

বিভিন্ন দর্শন শাখাগুলো এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে:

  • এপিকিউরিয়ানবাদ
  • সিনিসিজম
  • স্টইকবাদ
  • সন্দেহবাদ (স্কেপটিসিজম)

প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব সুখের ধারণা বিক্রি করতে চেয়েছে।

কিন্তু যদি আমরা আরও গভীরে দেখি, তাহলে কিছু সাধারণ সূত্র খুঁজে পাই, যা সুখের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।


সুখের তিনটি স্তম্ভ

আমি সুখের তিনটি প্রধান ভিত্তি চিহ্নিত করেছি, যেগুলো বিভিন্ন দার্শনিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যে পুনরাবৃত্তি হয়েছে।

১. সুখ কেবলমাত্র আনন্দ দ্বারা পরিমাপ করা যায় না

প্রাচীন গ্রিকরা সুখ বোঝাতে বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করত:

  • হেডোনিয়া – এটি তাত্ক্ষণিক আনন্দ বা ইন্দ্রিয়সুখ বোঝায়, যেমন বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করা বা ঘরে বসে চা পান করা।
  • ইউডাইমনিয়া – এটি “উন্নতি” বা “ফুল ফোটার” মতো একটি অবস্থা বোঝায়।

অনেক সময় আমরা অতীতের কঠিন সময়ের দিকে ফিরে তাকিয়ে বুঝতে পারি যে তখন আমরা সত্যিই সুখী ছিলাম।

বৌদ্ধধর্মেও একই ধারণা পাওয়া যায়।

  • বৌদ্ধদের মতে, আনন্দ হলো ইচ্ছা পূরণের একটি অস্থায়ী অনুভূতি
  • কিন্তু আমাদের হাজারো ইচ্ছা থাকে, যা কখনও পুরোপুরি পূরণ করা সম্ভব নয়।
  • তাই সুখ অর্জনের জন্য আমাদের এই ইন্দ্রিয়সুখের চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

তবে এখানে বিপদের দিকও আছে।

  • শুধুমাত্র আনন্দ সুখ নয় বলে মনে করলেই আমরা ভুল করে দুঃখকে সুখ বলে মনে করতে পারি
  • কষ্টকে গৌরবের বস্তু মনে করার প্রবণতা আমাদের ভুল পথে নিয়ে যেতে পারে।

২. পরিমিতিবোধ ও মধ্যপন্থা (Moderation & Balance)

এই ধারণাটি দাওবাদ, গ্রিক দর্শন, এবং আধুনিক জীবনধারায় (যেমন সুইডিশ “Lagom” ধারণায়) পাওয়া যায়।

দাওবাদ মতে:

  • জীবন কেবল সাদা-কালো নয়, বরং একটি মিশ্র বাস্তবতা।
  • ইয়িন (অন্ধকার, রহস্য, প্রবাহমানতা) এবং ইয়াং (উচ্ছ্বাস, শক্তি, সত্য) – এদের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই মূল কথা।

Lagom ধারণা (সুইডিশ জীবনধারা):

  • এটি বলে “যথেষ্ট” মানেই সর্বোত্তম
  • যেমন, এক কাপ কফি উপভোগ্য, কিন্তু সাত কাপ কফি ক্ষতিকর।
  • সমাজে ভারসাম্য রাখাও গুরুত্বপূর্ণ – যদি আমি সব কুকিজ নিয়ে নেই, তাহলে অন্যরা বঞ্চিত হবে।

এই “মধ্যপন্থা” ধারণাটি বিভিন্ন দর্শনেই পাওয়া যায়।


৩. সত্যিকারের সুখ কেবলমাত্র নৈতিকতার মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব

কিন্তু সমস্যা হলো—নৈতিকতা বলতে আমরা কী বুঝি?

যদিও বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং সময়ে নৈতিকতার সংজ্ঞা বদলেছে, কিছু গুণকে সর্বদাই “পুণ্য” এবং কিছু গুণকে সর্বদাই “অপুণ্য” হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

আমি পাঁচটি সাধারণ নৈতিক গুণ চিহ্নিত করেছি:

  1. পরোপকারিতা বনাম আত্মকেন্দ্রিকতা – ইসলামের যাকাত, খ্রিস্টধর্মের সন্ন্যাসী জীবন এবং কান্তের নীতিশাস্ত্রে এটি দেখা যায়।
  2. দয়া বনাম নিষ্ঠুরতা – “অপরের সাথে তেমন আচরণ কর, যেমনটি তুমি নিজের জন্য প্রত্যাশা কর”।
  3. ন্যায়বিচার বনাম অবিচার – প্লেটো, মেনসিয়াস এবং জন রলসের মতে, ন্যায়বিচার অপরিহার্য।
  4. জ্ঞান বনাম অজ্ঞতা – সক্রেটিস বলেছিলেন, “অপরীক্ষিত জীবন মূল্যহীন”।
  5. নম্রতা বনাম অহংকার – ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম, এবং বিভিন্ন ধর্মে এটি গুরুত্ব পেয়েছে।

বাস্তব জীবনে এই তিনটি স্তম্ভের প্রয়োগ

পিলার ১ – সুখ আনন্দের উপর নির্ভর করে না

  • উদাহরণস্বরূপ, পিতৃত্ব/মাতৃত্ব
  • বাবা-মায়েরা ঘুমের অভাব, বাচ্চাদের খাবার না খাওয়া ইত্যাদি নিয়ে অভিযোগ করেন।
  • কিন্তু তাদের জিজ্ঞাসা করলে বলবেন, “আমি জীবনের সবচেয়ে সুখী সময় পার করছি!”

পিলার ২ – মধ্যপন্থা

  • পরিমিতিবোধ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
  • সুখ কেবলমাত্র আনন্দ বা দুঃখের চূড়ান্ত অবস্থায় থাকে না, বরং মাঝামাঝি অবস্থানেই প্রকৃত সুখ খুঁজে পাওয়া যায়।

পিলার ৩ – নৈতিকতা ও সুখ পরস্পর সংযুক্ত

  • কেউ প্রকৃতপক্ষে সুখী হতে পারে না, যদি সে অনৈতিক জীবন যাপন করে।
  • পরোপকার, ন্যায়বিচার, ও জ্ঞান অর্জন সুখের পূর্বশর্ত।

উপসংহার

সুখ হলো একটি পথের অনুসন্ধান, যা শুধুমাত্র আনন্দের উপর নির্ভর করে না, বরং মধ্যপন্থা ও নৈতিকতার উপর ভিত্তি করে গঠিত।

🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *