চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। আজ প্রকাশিত টাইমস হায়ার এডুকেশন আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিং অনুসারে, বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান ১২০১–১৫০০ এর মধ্যে এবং বাংলদেশ থেকে স্থান পাওয়া ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এর অবস্থান ১৩তম। যে ৫টি সূচক (পাঠদান, গবেষণার পরিবেশ, গবেষণার মান, শিল্প-কারখানার সাথে সহযোগিতা, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সুনাম; মোট ৫০০ পয়েন্টস) অনুসরণ করে এই র্যাঙ্কিং করা হয়, তা খতিয়ে দেখলে বিশ্ববিদ্যালয়টির শক্তি এবং দুর্বলতার বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়। কিছু ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়টি সফলতা দেখাচ্ছে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে, তবে শিক্ষার মান এবং গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশের অন্যান্য শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক বিশ্লেষণ এর শক্তি ও দুর্বলতাগুলোকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর শক্তিশালী আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি। এই বিভাগে ৫৪.৫ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ৩১.৬ পয়েন্ট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৪৮.৩ পয়েন্ট অর্জন করেছে। এই স্কোরটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক সহযোগিতার সক্ষমতা এবং বৈচিত্র্যময় শিক্ষাগত পরিবেশকে প্রতিফলিত করে। এ থেকে বোঝা যায় যে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বৈশ্বিক পর্যায়ে এর প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ) যথাক্রমে ৬৫.২ এবং ৪৫.৯ পয়েন্ট স্কোর করেছে। ডিআইইউ এই ক্ষেত্রে শীর্ষে থাকলেও, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে এবং আরও আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক গবেষণা এবং দক্ষ শিক্ষার্থী তৈরির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি তার আন্তর্জাতিক উপস্থিতি আরও শক্তিশালী করতে পারে।
গবেষণার পরিবেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য দুর্বলতা প্রদর্শন করেছে। ১০০-এর মধ্যে মাত্র ৯.৩ পয়েন্ট স্কোর নিয়ে এটি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, যেমন বুয়েট (১৬.৪ পয়েন্ট) এবং ব্র্যাক (১১.৭ পয়েন্ট), এর তুলনায় অনেক পিছিয়ে। অন্যদিকে গবেষণার গুণগত মানের স্কোর ৫০ পয়েন্ট, যা সম্মানজনক হলেও ডিআইইউ (৮২.৬ পয়েন্ট) এবং এনএসইউ (৮০.৩ পয়েন্ট) এর তুলনায় কম।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি দুর্বল ক্ষেত্র হলো শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ততা। শিল্প আয় বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্জন ২১.৮ পয়েন্ট। এই স্কোরটি দেশের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে তুলনামূলক, যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (২১.৪ পয়েন্ট) এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (২২.১ পয়েন্ট)। এটি থেকে বুঝা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি একাডেমিয়া এবং শিল্পের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরির চেষ্টা করছে, যা শিক্ষার্থীদের মূল্যবান প্রায়োগিক অভিজ্ঞতা পাওয়ার সুযোগ প্রদান করবে। তবে, বুয়েট (৩৩.১ পয়েন্ট) এর তুলনায় চট্টগ্রাম অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পাঠদানের মানে উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে রয়েছে। ১৫.৬ পয়েন্ট নিয়ে এর অবস্থান বাংলদেশেরই অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের তুলনায় কম। উদাহরণস্বরূপ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যথাক্রমে ২৫.৪ এবং ২৪.৪ পয়েন্ট স্কোর করেছে, যখন বুয়েট ২২.৫ পয়েন্ট স্কোর করেছে। এটি নির্দেশ করে যে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের উচ্চ মানের শিক্ষাদান এর অভিজ্ঞতা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত সম্পদ এবং মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব রয়েছে।
তুলনামূলক তথ্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক মান উন্নয়নের জন্য আরও উন্নত পাঠদান, গবেষণা অবকাঠামোর উন্নয়ন, পর্যাপ্ত তহবিল যোগান এবং কৌশলগত উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে।